কুরআন ও হাদিস শিক্ষা (তৃতীয় অধ্যায়)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা | NCTB BOOK
299
Summary

কুরআন মজিদ হলো মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী, এবং মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর বাণী, কর্ম ও মৌন সম্মতিকে বলা হয় হাদিস। কুরআন ও হাদিস ইসলামের প্রধান উৎস। মহানবি (স.) বলেছেন, "আমি তোমাদের নিকট দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না": আল্লাহর কিতাব (আল-কুরআন) ও তার রাসুলের সুন্নত (মুসলিম)।

এ অধ্যায়ে আমরা নিচের বিষয়গুলো শিখব:

  • আল-কুরআনের পরিচয় ও গুরুত্ব
  • আল-কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত
  • তাজবিদের গুরুত্ব ও বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ
  • নির্ধারিত পাঁচটি সূরা অর্থসহ মুখস্থ ও মূল বক্তব্য ব্যাখ্যা
  • পটভূমি (শানে নুযুল) ব্যাখ্যা
  • মুনাজাতমূলক (প্রার্থনামূলক) তিনটি আয়াত অর্থসহ বলা
  • হাদিসের পরিচয়, গুরুত্ব ও নৈতিক গুণাবলি
  • মুনাজাতমূলক দুটি হাদিস অর্থসহ পড়া ও ব্যাখ্যা
  • হাদিসের আলোকে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় ও গুরুত্ব

কুরআন মজিদ হলো মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী। আর মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর বাণী, কর্ম ও মৌনসম্মতিকে বলা হয় হাদিস। কুরআন মজিদ ও হাদিস শরিফ হলো ইসলামের প্রধান দুটি উৎস। মহানবি (স.) বলেছেন, আমি তোমাদের নিকট দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে (মেনে চললে) তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। এ দুটি হলো আল্লাহর কিতাব (আল-কুরআন) ও তাঁর রাসুলের সুন্নত (মুসলিম)।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

  • আল-কুরআনের পরিচয় ও গুরুত্ব বর্ণনা করতে পারব।
  • আল-কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • তাজবিদ-এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব ও মাখরাজ আয়ত্ত করে বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করতে সক্ষম হবো।
  • কুরআনের নির্ধারিত পাঁচটি সূরা অর্থসহ মুখস্থ বলতে ও মূল বক্তব্য ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • নির্ধারিত পাঁচটি সূরার পটভূমি (শানে নুযুল) ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • মুনাজাতমূলক (প্রার্থনামূলক) তিনটি আয়াত অর্থসহ বলতে পারব।
  • হাদিসের পরিচয় ও গুরুত্ব এবং নৈতিক গুণাবলি বিষয়ক দুটি হাদিসের অর্থসহ শিক্ষা বর্ণনা করতে পারব।
  • মুনাজাতমূলক দুটি হাদিস অর্থসহ পড়তে, বলতে ও ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • হাদিসের আলোকে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় ও গুরুত্ব বর্ণনা করতে পারব।
Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

ফরিদা বেগম প্রতিদিন সকালে কুরআন তিলাওয়াত করেন। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে তিনি অনেক সওয়াব লাভ করবেন?

উত্তম ইবাদত
ফরজ ইবাদত
ওয়াজিব ইবাদত
সুন্নত ইবাদত
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

ফরিদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সে শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে না। সে ঠিক করল শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শিখবে।

উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

সফিকুল ইসলাম দিনমজুরি করে খুব কষ্টের মধ্যে সংসার চালায়। সে অভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে।

আত্মীয়স্বজনের নিকট টাকা চাইবে
হালাল রিযিকের জন্য আল্লাহর কাছে মুনাজাত করবে
সরকারের কাছে সাহায্য চাইবে
অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করবে

আল-কুরআনের পরিচয় (পাঠ ১)

155

পরিচয়
কুরআন মজিদ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। এটি মহান আল্লাহর বাণী। মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা শেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর উপর এ কিতাব নাজিল করেন। আল্লাহ তায়ালার পরিচয়, তার গুণাবলি, ইমান ও ইসলামের সকল বিষয় এতে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে রয়েছে জ্ঞানবিজ্ঞানের সারকথা। কোন পথে চললে মানুষ সফলতা লাভ করবে তাও এতে বলে দেওয়া হয়েছে।
এটি মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী। আজ পর্যন্ত এটি অবিকৃত রয়েছে। কেউ এর একটি নুকতা, অক্ষর, শব্দ বা হরকতও পরিবর্তন করতে পারেনি। আর ভবিষ্যতেও পারবে না। কেননা, এর সংরক্ষক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা।

কুরআন মজিদ অবতরণ
আল-কুরআন সর্বশেষ নবি ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। এটি 'লাওহি মাহফুয' বা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) আরব দেশের মক্কা নগরে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার লোকজন ছিল মূর্তিপূজক। তাদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি, কাটাকাটি ও কলহ-বিবাদ লেগেই থাকত। মহানবি (স.) এসব পছন্দ করতেন না। তিনি ভাবতেন যে, সকল মানুষের একজনই সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন। তাঁর দেখানো পথে চললে সমাজে কোনোরূপ অশান্তি থাকবে না। এজন্য তিনি হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন। আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল (আ.) ফেরেশতার মাধ্যমে তাঁর নিকট আল-কুরআন নাজিল করেন। এ সময় আল-কুরআনের সূরা আল-আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। পরবর্তীকালে প্রয়োজন অনুসারে কুরআনের নানা আয়াত নাজিল করা হয়। এভাবে মহানবি (স.)-এর উপর ২৩ বছরে পবিত্র কুরআন সম্পূর্ণরূপে নাজিল হয়।
আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য
আল-কুরআন সর্বশেষ আসমানি কিতাব। আল্লাহ তায়ালা সর্বমোট ১০৪ (একশত চার) খানা আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। এগুলোর মধ্যে ১০০ (একশত) খানা ছোট কিতাব। এগুলোকে বলা হয় সহিফা। আর ৪ (চার) খানা বড়ো। এগুলো হলো-তাওরাত, যাবুর, ইনজিল ও কুরআন। আল-কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ। এরপর আর কোনো কিতাব আসবে না।
কুরআন মজিদ সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এতে দীনের যাবতীয় বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষের জীবনে যেসব সমস্যার উদ্ভব হয়ে থাকে তার সমাধানের ব্যাপারে এতে নির্দেশনা রয়েছে। পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবসমূহের মূল শিক্ষাও এতে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আল-কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব।
আল-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী। এর ভাব ও ভাষা অনন্য ও অপূর্ব। এটি মহানবি (স.)-এর সবচেয়ে বড়ো মু'জিযা। কেউই এর ক্ষুদ্রতম সূরার সমতুল্য কিছু রচনা করতেও সক্ষম হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না।

আল-কুরআনের গুরুত্ব
আল-কুরআন জ্ঞানসমূহের ভাণ্ডার। এতে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার পরিচয়, তাঁর গুণাবলির বর্ণনা, তাঁর ক্ষমতা ও নিয়ামতসমূহের বর্ণনা। আল-কুরআনে মানব সৃষ্টির অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। সৌরজগৎ, আসমান জমিন, নক্ষত্ররাজি, পাহাড়, পর্বত সবকিছু সম্পর্কেই এতে উল্লেখ করা হয়েছে। পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ঘটনা, নবি-রাসুলগণের বিবরণ, পুণ্যবান ও পাপীদের অবস্থা ইত্যাদিও আল-কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে।
আল-কুরআনে নানারকম বিধিবিধান ও আইনকানুন বর্ণিত হয়েছে। এটি সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী। কীভাবে চললে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি লাভ করবে এর দিকনির্দেশনাও আল-কুরআনে দেওয়া আছে। আল-কুরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। এতে দীনের সকল কিছুর জ্ঞান সন্নিবেশিত আছে। আল-কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা আমাদের সকলের একান্ত কর্তব্য। সুতরাং আমরা আল-কুরআন পড়ব এবং এর নানাবিধ জ্ঞান অর্জন করব।

Content added By

কুরআন তিলাওয়াত (পাঠ ২)

129

পরিচয়
তিলাওয়াত আরবি শব্দ। এর অর্থ পাঠ করা, পড়া, আবৃত্তি করা। পবিত্র কুরআন পাঠ করাকে কুরআন তিলাওয়াত বলা হয়।
আল-কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে। সুতরাং একে আরবিতেই পড়তে হবে। এজন্য আরবি হরফ বা বর্ণসমূহ চিনে তিলাওয়াত করা শিখতে হবে। এভাবে আরবিতে সুন্দর করে স্পষ্ট উচ্চারণে আল-কুরআন পাঠ করাকে কুরআন তিলাওয়াত বলে।
উল্লেখ্য, কুরআন শব্দটির মূল অর্থ পঠিত। অর্থাৎ যা পাঠ করা হয়েছে। সারা বিশ্বে আল-কুরআনই সবচেয়ে বেশি পাঠ (তিলাওয়াত) করা হয়। এজন্যই একে কুরআন বলা হয়। মুসলমানগণ দৈনিক পাঁচবার সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করেন। এছাড়া আমরা অন্য সময়েও কুরআন তিলাওয়াত করে থাকি।
কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব
কুরআন মজিদ তিলাওয়াতের গুরুত্ব অনেক। এটি আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এতে মানুষের কল্যাণের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং আমাদের উচিত বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। কুরআন তিলাওয়াত করলে আমরা আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ জানতে পারব। বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করা উত্তম।
আমাদের প্রিয় নবি (স.) এবং তাঁর সাহাবিগণ প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করতেন, কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী আমল করতেন। কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা সালাতে (নামাযে) কুরআন পড়তে হয়। আর কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া সালাত শুদ্ধ হয় না। সুতরাং আমরা গুরুত্ব সহকারে শুদ্ধরূপে কুরআন তিলাওয়াত শিখব এবং প্রতিদিন তিলাওয়াত করব।
কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত
কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত (মাহাত্ম্য) অনেক বেশি। কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করা হলো নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত। কুরআন তিলাওয়াত করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। যে ঘরে কুরআন পড়া হয় সে ঘরে আল্লাহ পাকের রহমত নাজিল হয়। মহানবি (স.)-এর হাদিসে আছে, পবিত্র কুরআনের প্রতিটি হরফের পরিবর্তে দশটি করে নেকি লেখা হয়। সুতরাং বোঝা গেল যে, কুরআন তিলাওয়াত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। আমরা সবাই বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করব।
নাযিরা তিলাওয়াত
আল-কুরআন দেখে দেখে পড়াকে নাযিরা তিলাওয়াত বলে। কুরআন মজিদ দেখে পড়াও উত্তম ইবাদত। কুরআন মজিদ দেখে দেখে অথবা মুখস্থ যেভাবেই পাঠ করা হোক তাতে পুণ্য রয়েছে। কুরআন পাঠ মনে প্রশান্তি আনে। অন্তরাত্মা পরিশুদ্ধ হয়। কিয়ামতের দিন কুরআন আল্লাহর নিকট তাদের জন্য সুপারিশ করবে যারা পৃথিবীর জীবনে কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করত।

Content added By

তাজবিদ ( التَّجْوِيدُ ) (পাঠ ৩)

153

তাজবিদের পরিচয়
তাজবিদ শব্দের অর্থ উত্তম বা সুন্দর করা। আল-কুরআনের আয়াতসমূহকে উত্তমরূপে বা সুন্দর ও শুদ্ধ করে পড়াকে তাজবিদ বলা হয়। অর্থাৎ আল-কুরআনের প্রতিটি হরফকে মাখরাজ ও সিফাত অনুসারে বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করাকে তাজবিদ বলে।
আরবি হরফ কোনোটি মোটা করে পড়তে হয়, আবার কোনোটি চিকন করে পড়তে হয়। উচ্চারণের এ বিশেষ অবস্থাকে বলা হয় সিফাত। যেমন: (তা) এবং (ত্বয়া) হরফ দুটির উচ্চারণের স্থান একই। কিন্তু এদের সিফাত ভিন্ন। এ দুটো হরফের মধ্যে ৬ (ত্বয়া)-কে মোটা করে পড়তে হয় এবং ৬ (তা)-কে চিকন করে পড়তে হয়। আবার মাখরাজ হলো উচ্চারণের স্থান। যেমন: ১ (হা) এবং (হা) এখানে হরফ দুটিকে ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে উচ্চারণ করতে হয়। এভাবে মাখরাজ ও সিফাত ঠিক রেখে সুন্দর করে কুরআন তিলাওয়াত করাই তাজবিদ।

তাজবিদের গুরুত্ব
তাজবিদ অনুযায়ী কুরআন পড়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। তাজবিদ অনুসারে কুরআন না পড়লে গুনাহ হয়। এতে অনেক সময় আল-কুরআনের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। আর অশুদ্ধ তিলাওয়াতের ফলে সালাতও পূর্ণাঙ্গ হয় না। যেমন: সূরা ইখলাসে এসেছে- قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ - বলুন (হে নবি)। তিনি আল্লাহ; একক ও অদ্বিতীয় এখানে শব্দের অর্থ বলুন আর যদি ৩ (ক্বাফ)-কে ভুল মাখরাজ থেকে উচ্চারণ করে বলা হয় তাহলে অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। কেননা ওঁ শব্দের অর্থ খাও বা ভক্ষণ কর। ফলে আল-কুরআনের অর্থের বিকৃতি ঘটে। যা কোনোভাবেই জায়েজ নয়। তাজবিদ সহকারে শুদ্ধ ও সুন্দর করে কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلاً

অর্থ: "কুরআন আবৃত্তি করো ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে।" (সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ৪)

তাজবিদ সহকারে কুরআন পড়া আল্লাহ পাকের নির্দেশ। আর শুদ্ধরূপে কুরআন শিক্ষার মাহাত্ম্য অনেক। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন-

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ

'তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে তা শিক্ষা দেয়।' (বুখারি)
সুতরাং আমরা তাজবিদ সহকারে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করব।

Content added By

মাখরাজ ( الْمَخْرَجُ ) (পাঠ ৪)

2.5k

পরিচয়
মাখরাজ শব্দের অর্থ বের হওয়ার স্থান, উচ্চারণের স্থান। আরবি হরফসমূহ মুখের যে স্থান থেকে উচ্চারিত হয় সে স্থানকে মাখরাজ বলা হয়।
আরবি হরফ (বর্ণ) মোট ২৯টি। এগুলো মুখের মোট ১৭টি স্থান থেকে উচ্চারিত হয়। এ ১৭টি স্থানকে বলা হয় মাখরাজ। মাখরাজ মোট ১৭টি।
১৭টি মাখরাজ আবার মুখের ৫টি স্থানে অবস্থিত। যথা- (১) মুখের খালি জায়গা বা জাওফ, (২) কণ্ঠনালি বা হলক, (৩) জিহ্বা, (৪) উভয় ঠোঁট এবং (৫) নাসিকামূল।
নিম্নে ছক আকারে কোন স্থানে কয়টি মাখরাজ অবস্থিত তা দেখানো হলো:

মুখের স্থান

মাখরাজ সংখ্যা

১. জাওফ বা মুখের খালি জায়গা

২. হলক বা কণ্ঠনালি

৩. জিহ্বা

৪. উভয় ঠোঁট

৫. নাসিকামূল

০১টি

০৩টি

১০টি

০২টি

০১টি

মাখরাজের বিস্তারিত বিবরণ
১। প্রথম মাখরাজ হলো জাওফ। জাওফ হলো মুখের ভিতরের খালি জায়গা। এ স্থান থেকে তিনটি হরফ উচ্চারিত হয়। যথা-
ক. আলিফ (1) যখন এর পূর্বের হরফে যবর থাকে। যেমন: ৮
খ. জযম বিশিষ্ট ওয়াও (৩) যখন এর পূর্বের হরফে পেশ হয়।
গ. জযম বিশিষ্ট ইয়া (৬) যখন এর পূর্বের হরফে যের হয়।
এ হরফ তিনটি মুখের খালি স্থান থেকে বাতাসের উপর উচ্চারিত হয়। এতে জিহ্বা, দাঁত, ঠোঁট, কণ্ঠনালি কোনো কিছুরই ব্যবহার হয় না। এগুলোকে মাদ-এর হরফ বলা হয়। অর্থাৎ এগুলো পড়ার সময় এক আলিফ পরিমাণ দীর্ঘ করে পড়তে হয়।
২। কণ্ঠনালির নিম্নভাগ থেকে উচ্চারিত হয় দুটি হরফ।

৩। কণ্ঠনালির মধ্যভাগ থেকে উচ্চারিত হয় দুটি হরফ। এ দুটি হলো-হা (عْ) ও আইন (عْ)।
যেমন : أعْ

৪। কণ্ঠনালির উপরিভাগ থেকে উচ্চারিত হয় দুটি হরফ। এ দুটি হলো-খা (غ) ও গাইন (غ)।
যেমন : آغ

উপরিউক্ত ছয়টি হরফ কণ্ঠনালি বা হলক নামক স্থান থেকে উচ্চারিত হয়। এজন্য এ ছয়টি হরফকে হরফে হলকি বা কণ্ঠবর্ণ বলা হয়।

৫। পঞ্চম মাখরাজ হলো জিহ্বার গোড়া এবং তার বরাবর উপরের তালু। এ স্থান থেকে একটি হরফ উচ্চারিত হয়। এটি হলো- ক্বাফ (ق)। যেমন: أق

৭। জিহ্বার মধ্যভাগ এবং এর সোজা উপরের তালু। এ মাখরাজ থেকে তিনটি হরফ উচ্চারিত হয়। এগুলো হলো- জিম (ج), শিন (ش), ইয়া (ي) । যেমন : أني

৮। অষ্টম মাখরাজ হলো জিহ্বার পার্শ্বভাগ ও উপরের পাটির দাঁতের মাড়ি। এ দুই-এর সংযোগে উচ্চারিত হয় দোয়াদ (ض) হরফটি।

এ হরফটি উচ্চারণে জিহ্বার পার্শ্বভাগকে ডান দিক অথবা বাম দিকের উপরের দাঁতের মাড়ির সাথে লাগিয়ে উচ্চারণ করা যায়। যেমন: أض
৯। জিহ্বার অগ্রভাগের পাশ ও সামনের উপরের দাঁতের গোড়ার দিকের তালুর সাথে মিলে উচ্চারিত হয় একটি হরফ। এটি হলো- লাম (ل)। যেমন: أل

১৩। জিহ্বার অগ্রভাগ ও সামনের নিচের দুই দাঁতের মাথা এবং উপরের দাঁতের সামান্য অংশ মিলে উচ্চারিত হয় মোট তিনটি হরফ। এগুলো হলো- সিন (س), সোয়াদ (ص)
যেমন : أض

১৪। জিহ্বার অগ্রভাগ ও সামনের উপরের বড় দুই দাঁতের মাথা। এখান থেকে উচ্চারিত হয় - যোয়া (ظ)। যেমন: أظ

১৫। নিচের ঠোঁটের ভিতরের অংশ বা ভিজা অংশ এবং সামনের উপরের দুই দাঁতের মাথা। এ মাখরাজ থেকে উচ্চারিত হয় । যেমন: أ

১৬। দুই ঠোঁট। এখান থেকে উচ্চারিত হয় তিনটি হরফ। যথা-
ক. বা (ب) উচ্চারিত হয় নিচের ঠোঁটের ভিতরের অংশ থেকে। যেমন: أَب
খ. মীম উচ্চারিত হয় ঠোঁটের বাইরের বা শুষ্ক অংশ থেকে। যেমন: বাঁ
গ. ওয়াও (واو) এ হরফ উচ্চারণে দুই ঠোঁট সরাসরি মিলিত হয় না। বরং উভয় ঠোঁট ডান ও বাম পাশ থেকে গোল হয়ে অর্ধফোটা ফুলের মতো মধ্যস্থলে ছিদ্র রেখে উচ্চারিত হয়। যেমন: أو

১৭। শেষ মাখরাজ হলো নাসিকামূল। এখান থেকে গুন্নাহসমূহ উচ্চারিত হয়। যেমন: জযমযুক্ত নুনকে কখনো কখনো গোপন করে নাসিকামূল থেকে উচ্চারণ করা হয়। তাশদিদযুক্ত নুনের মাখরাজও এটিই। যেমন : إِنَّ

তাজবিদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হলো মাখরাজ। হরফ (বর্ণ)-সমূহকে নিজ নিজ মাখরাজ (উচ্চারণস্থল) থেকে উচ্চারণ করা আবশ্যক। সুতরাং আমরা হরফগুলোর মাখরাজ শিখব ও নিয়মিত অনুশীলন করব।

কাজ: শিক্ষার্থীরা -
ক. আরবি ২৯টি বর্ণ লিখে একটি পোস্টার তৈরি করবে।
খ. ১৭টি মাখরাজের একটি তালিকা তৈরি করবে।

নতুন শব্দ পরিচয়

লাওহি মাহফুয - সংরক্ষিত ফলক।

হিদায়াত - দিকনির্দেশনা। সত্য দীনের প্রতি দিকনির্দেশনা প্রদান।

হরফ - বর্ণ।

নুকতা - আরবি বর্ণসমূহের উপরে, নিচে বা মধ্যে ব্যবহৃত বিন্দু বা ফোঁটাকে নুকতা বলে। যেমন : ن

হরকত - যবর, যের, পেশকে হরকত বলে।

আয়াত - আল-কুরআনের এক একটি বাক্যকে বলা হয় আয়াত।

জিবরাইল (আ.) - প্রধান ফেরেশতাগণের একজন। তিনি আল্লাহ তায়ালার বাণী নিয়ে নবি- রাসুলগণের নিকট আসতেন।

মু'জিযা - অলৌকিক ঘটনা বা বস্তু। নবি-রাসুলগণের দ্বারা প্রকাশিত অলৌকিক ঘটনা ও বস্তুকে মু'জিযা বলা হয়।

নাজিল - অবতীর্ণ।

সাহাবা - হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর সাথীগণ। যাঁরা মহানবি (স.)-কে ইমানসহ দেখেছেন

কালাম -বাণী

জায়েজ - বৈধ, অবৈধের বিপরীত।

Content added By

সূরা আল-ফাতিহা (পাঠ ৫)

123

আল-কুরআনের সর্বপ্রথম সূরা হলো আল-ফাতিহা। ফাতিহা শব্দের অর্থ ভূমিকা, মুখবন্ধ, দ্বার উন্মোচনকারী ইত্যাদি। যেহেতু এ সূরার মাধ্যমে কুরআনুল কারিম শুরু করা হয়, সেজন্য এ সূরার নাম আল-ফাতিহা। একে ফাতিহাতুল কিতাব বা ফাতিহাতুল কুরআনও বলা হয়। অর্থাৎ কিতাব বা কুরআনের ভূমিকা।

এ সুরাটি মাক্কি সূরা। অর্থাৎ রাসুল (স.)-এর হিজরতের পূর্বে এ সূরাটি মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ হয়। পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে এ সুরাই প্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা সর্বমোট ৭টি। সূরা আল-ফাতিহা কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এর বহু নাম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১. সূরাতুল হামদ (প্রশংসার সূরা) এ সূরায় আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা হয়েছে।
২. উম্মুল কুরআন (কুরআনের জননী): এ সূরা পবিত্র কুরআনের সারসংক্ষেপস্বরূপ।
৩. সূরাতুস সালাত (সালাতের সূরা): সালাতের শুরুতে এ সূরা পাঠ করা অপরিহার্য। এ সূরা ব্যতীত সালাত শুদ্ধ হয় না।
৪. সূরাতুশ শিফা (রোগমুক্তির সূরা): এ সুরার মাধ্যমে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৫. সূরাতুদ্ দোয়া (দোয়া বা প্রার্থনামূলক সূরা): এ সূরার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা নিবেদন করা হয়।

শব্দার্থ

الْحَمْدُ - সকল প্রশংসা।

الْعَلَمِينَ - সমগ্র সৃষ্টিজগৎ, জগৎসমূহ।

ملك - মালিক, অধিপতি।

يَوْمِ الدِّينِ - বিচার দিবস, কর্মফল দিবস।

اياك - শুধু তোমরাই।

نَعْبُدُ - আমরা ইবাদত করি।

نَسْتَعِينُ - আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি।

صراط - পথ, রাস্তা।

الْعُمْت - তুমি অনুগ্রহ করেছ।

الْمَغْضُوبِ - ক্রোধ-নিপতিত।

الضَّالِّينَ - পথভ্রষ্ট।

অনুবাদ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ

সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই।

الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ

যিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।

مُلِكِ يَوْمِ الدِّينِ

যিনি বিচার দিনের মালিক।

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য চাই।]

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

আমাদের সরল পথ দেখাও।

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ

তাদের পথ, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ।

غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

তাদের পথ নয়, যারা ক্রোধ-নিপতিত ও পথভ্রষ্ট।

ব্যাখ্যা
সূরা আল-ফাতিহা আল-কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এ সূরায় সম্পূর্ণ কুরআনের সারসংক্ষেপ বর্ণনা করা হয়েছে। এর প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা বর্ণনা করা হয়েছে। শেষ তিনটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালার নিকট মানুষের মুনাজাত ও প্রার্থনার বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। আর মধ্যবর্তী আয়াতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও দোয়া একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা পাওয়ার যোগ্য। কেননা তিনিই সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনিই বিশ্বজগতের মালিক ও প্রতিপালক। সৃষ্টিজগতের সবকিছুই তার রহমত ও করুণায় লালিতপালিত হয়। তার নিয়ামত সকলেই ভোগ করে। তাছাড়া তিনি শুধু ইহকালের মালিক নন, বরং তিনি পরকালেরও মালিক। কিয়ামত, হাশর, মিযান, জান্নাত-জাহান্নাম সবকিছুই তার অধীন। শেষ বিচারের দিনে তিনিই একমাত্র বিচারক। তিনিই নিজ ক্ষমতায় পুণ্যবানদের পুরস্কার ও পাপীদের শাস্তি দেবেন। সুতরাং সকল প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র তারই প্রাপ্য। এতে তার কোনো অংশীদার নেই।

এই সূরার প্রথম তিন আয়াতে আল্লাহ তায়ালার সীমাহীন কুদরত ও ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে এবং মধ্যবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে যে, মানুষ শুধু তাঁরই ইবাদত করবে এবং তারই নিকট সাহায্য চাইবে। কেননা তিনিই ইবাদতের যোগ্য। আর তিনি ব্যতীত সাহায্যকারী কেউ নেই।
এ সূরার শেষ তিন আয়াতে আল্লাহ তায়ালার নিকট মানুষের প্রার্থনা ও মুনাজাত বর্ণিত হয়েছে। যেহেতু মহান আল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা এবং নিয়ন্ত্রক। সুতরাং সঠিক পথ একমাত্র তিনিই দেখাতে পারেন। তিনিই ভালো জানেন কোন পথ সঠিক আর কোন পথ ভ্রান্ত। অতএব, মানুষের উচিত তার নিকট সত্যপথের সন্ধান প্রার্থনা করা। যে পথ আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ, নবি-রাসুলগণ অনুসরণ করেছেন সে পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহর নিকট মুনাজাত করা। আর যে পথে অভিশপ্ত, পথভ্রষ্টরা পরিচালিত হয়েছে সে পথ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
নৈতিক শিক্ষা
আল্লাহ তায়ালা একক, অদ্বিতীয় ও সকল কিছুর মালিক। বিশ্বজগতের সকল প্রশংসা তারই প্রাপ্য। তিনিই মানুষকে সরল, সঠিক পথের সন্ধান দেন। সুতরাং আমরা সকাল-সন্ধ্যায় তার প্রশংসা করব। সবসময় তাঁর ইবাদত করব। আর আমাদের সকল সঠিক পথের সন্ধান দানের জন্য তার নিকটই প্রার্থনা জানাব। সাথে সাথে পথভ্রষ্ট ও অন্যায়কারীদের আচরণ অনুসরণ থেকে আমরা বিরত থাকব।

Content added By

সূরা আন-নাস ( سُوْرَةُ النَّاسِ ) (পাঠ ৬)

112

আল-কুরআনের সর্বশেষ সুরা হচ্ছে সূরা আন-নাস। এটি পবিত্র কুরআনের ১১৪ তম সূরা। এ সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়। এর আয়াত সংখ্যা ৬টি।

এ সূরায় র্যা (আন-নাস) শব্দটি মোট পাঁচবার ব্যবহৃত হয়েছে। সুরায় ব্যবহৃত এ النَّاسُ শব্দ থেকেই এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরা আল-ফাতিহায় আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা হয়েছে। তারপর তার নিকট সরল পথের সন্ধান চাওয়া হয়েছে। অতঃপর কুরআনের অন্যান্য সূরায় মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শয়তান মানুষকে সঠিক পথ থেকে বিরত রাখতে চায়। তাই সবশেষে এ সূরায় আল্লাহ পাকের নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়। এভাবে কুরআনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়েছে।

শব্দার্থ

قل - আপনি বলুন; তুমি বলো।

أَعُوذُ - আমি আশ্রয় চাই, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমি শরণ নেই।

رب - রব, প্রতিপালক।

الناس - মানুষ, মানবজাতি।

مَلِكِ - মালিক, অধিপতি।

اله - মাবুদ, উপাস্য।

شر - অনিষ্ট, ক্ষতি।

الْوَسْوَاسِ - কুমন্ত্রণাদাতা।

يُوَسْوِسُ - সে কুমন্ত্রণা দেয়।

صُدُورِ - বক্ষসমূহ, অন্তরসমূহ।

الْجِنَّةِ - জিন।

অনুবাদ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ

১. আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের নিকট।

مَلِكِ النَّاسِ

২. মানুষের অধিপতির নিকট।

اله النَّاسِ

৩. মানুষের ইলাহ এর নিকট।

مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ

৪. আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতা (শয়তান)-এর অনিষ্ট থেকে।

الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ

৫. যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।

مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

৬. জিন এবং মানুষের মধ্য থেকে।

ব্যাখ্যা
সূরা আন-নাস-এর আয়াতসমূহে দুই প্রকারের আলোচনা রয়েছে। প্রথম তিন আয়াতে মহান আল্লাহর তিনটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো রব, মালিক ও ইলাহ। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালাই মানুষের রব, মালিক ও ইলাহ। তিনি ব্যতীত আর কেউ এ তিনটি গুণের অধিকারী নয়। মানুষ হলো তার বান্দা। সুতরাং মানুষের উচিত সর্বাবস্থায় আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। এভাবে সূরার প্রথম অংশে আল্লাহ তায়ালার তিনটি গুণের উল্লেখ করে তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।
সূরার দ্বিতীয় অংশে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার জন্য মহান আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা হয়েছে। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। সে গৌপনে, প্রকাশ্যে, ঘুমন্ত অবস্থায়, জাগ্রত অবস্থায় সবসময় মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। তার কাজই হলো কুমন্ত্রণা দিয়ে মানুষের অন্তরকে বিপথগামী করা। মানুষ যেন আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে যায়, তার ইবাদত না করে ইত্যাদি কুমন্ত্রণা শয়তান দিয়ে থাকে। শয়তান শুধু জিনই নয় বরং মানুষের মধ্যেও শয়তান রয়েছে। মানুষ শয়তানও অন্যকে প্রতারিত করে, দীন থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। এসব শয়তান থেকে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় ব্যতীত বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এজন্য এ সুরায় শয়তানের সকল কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

নৈতিক শিক্ষা
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতিপালক। তিনিই আমাদের মাবুদ। আমাদের সকল কিছুই তার দান। তিনিই সমগ্র বিশ্বজগতের প্রকৃত অধিপতি। সুতরাং তার আদেশ-নিষেধ আমরা সবসময় মেনে চলব। আর শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকব। কেননা শয়তান মানুষকে অন্যায়, অনৈতিক ও অশ্লীল কাজের দিকে পরিচালনা করে। ফলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকতে পারলে অনৈতিক কাজ থেকেও বেঁচে থাকা যাবে।

কাজ: শিক্ষার্থী পাশের বন্ধুকে সূরা আন-নাসের অর্থ ও নৈতিক শিক্ষা শোনাবে।
Content added By

সূরা আল-ফালাক্ব ( سُوْرَةُ الْفَلَقِ ) (পাঠ ৭)

132

সূরা আল-ফালাক্ব আল-কুরআনের ১১৩তম সূরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সূরার আয়াত সংখ্যা ৫টি। এ সূরার প্রথম আয়াতের শেষ শব্দ হলো র্যা (ফালাক্ব)। এ শব্দ থেকেই এ সূরার নাম সূরা আল-ফালাক্ব রাখা হয়েছে।
সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস-এর মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ সূরা দুটিতে বিভিন্ন জিনিসের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। এ সূরা দুটি নাজিলের কারণ নিম্নরূপ:
একবার লাবীদ ইবনুল আ'সাম নামক এক ইহুদি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর উপর জাদু করে। এ কাজে সে তার কন্যাদের সাহায্য নেয়। তারা গোপনে রাসুল (স.)-এর একটি পবিত্র চুল সংগ্রহ করে এবং তাতে এগারোটি গিরা দিয়ে জাদু করে। ফলে রাসুল (স.) অসুস্থ হয়ে পড়েন। জাদুর কারণে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কষ্ট হতে থাকে। এমতাবস্থায় আল্লাহ তায়ালা এ সুরা দুটি নাজিল করেন। এ সূরা দুটিতে মোট ১১টি আয়াত রয়েছে। প্রতিটি আয়াত পড়ে প্রতিটি গিরাতে ফুঁক দিলে জাদুর প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়। রাসুল (স.) সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।

শব্দার্থ

الْفَلَقِ - প্রভাত, ঊষা।

من - হতে, থেকে।

خَلَقَ - তিনি সৃষ্টি করেছেন।

غَاسِقٍ - রাতের অন্ধকার।

إذا - যখন।

وَقَبَ - গভীর হলো, আচ্ছন্ন হলো।

التفات - ফুঁক দানকারী নারীগণ।

الْعُقَدِ - গ্রন্থিসমূহ, গিরাসমূহ।

حاسد - হিংসাকারী, হিংসুক।

حسن - সে হিংসা করল।

অনুবাদ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ

১. আপনি বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি প্রভাতের স্রষ্টার নিকট।

مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

২. তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে।

وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ

৩. রাতের আঁধারের অনিষ্ট থেকে, যখন তা গভীর হয়।

وَمِنْ شَرِّ النَّفْتِ فِي الْعُقَدِ

৪. এবং অনিষ্ট থেকে ঐ সমস্ত নারীদের, যারা গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয়।

وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

৫. এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।

ব্যাখ্যা
এ সূরায় আল্লাহ তায়ালার নিকট অনিষ্টকর বস্তু থেকে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এর প্রথম আয়াতে ঊষার রব আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। মূলত আল্লাহ পাক সকল শক্তির উৎস। বিশ্বজগতের সবকিছুই তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনিই রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে রূপান্তর করেন। তিনিই সকাল, সন্ধ্যা, ঊষা ইত্যাদির আগমন ঘটান। সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে তিনিই রক্ষা করেন। এজন্য সূরার প্রথমেই আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।
এর পরবর্তী আয়াতগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের অনিষ্ট বা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সবকিছুরই স্রষ্টা। এসব সৃষ্টির মধ্যে অনেক হিংস্র, বিষাক্ত ও অনিষ্টকর সৃষ্টিও রয়েছে। এগুলো মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এগুলোর অনিষ্ট থেকে রক্ষাকর্তা হলেন মহান আল্লাহ। গভীর রাতে নানারূপ বিপদাপদ ঘটতে পারে। যেমন: জিন, শয়তান, চোর, ডাকাত, শত্রুর আক্রমণ ইত্যাদি। এসবের অনিষ্ট থেকেও রক্ষাকর্তা মহান আল্লাহ। তাছাড়া জাদুকর নরনারী ও হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয়দাতাও আল্লাহ তায়ালা। আয়াতগুলোতে উল্লিখিত সমুদয় বিষয় থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।

নৈতিক শিক্ষা
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রভু। তিনিই সকল কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। সুতরাং সকল বিপদে-আপদে আমরা তাঁরই নিকট সাহায্য চাইব। সব ধরনের অনিষ্ট থেকে তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করব। সাথে সাথে হিংসা, জাদু-টোনা, অপরের ক্ষতিসাধন ইত্যাদি কাজ থেকে আমরা নিজেরা বিরত থাকব।

Content added By

সূরা আল-হুমাযাহ (পাঠ ৮)

219

সূরা আল-হুমাযাহ আল-কুরআনের ১০৪ তম সূরা। এ সূরাটি পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৯টি। এ সূরার প্রথম আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ হুমাযাহ অনুসারে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
আমরা এ সূরাটি অর্থসহ মুখস্থ করব এবং এ সূরার শিক্ষা অনুযায়ী আমল করব।

শব্দার্থ

وَيْلٌ - দুর্ভোগ, ধ্বংস।

كل - প্রত্যেক, সকল।

هُمَزَةٍ - পশ্চাতে নিন্দাকারী।

لمَزَةٍ - সম্মুখে নিন্দাকারী।

جمع - সে জমা বা একত্র করেছে, সে সঞ্চয় করেছে।

مالا - মাল, ধনসম্পদ।

عددة - সে বারবার গণনা করেছে।

يحسب - সে ধারণা করে, সে হিসাব করে।

اخلدة - তা অমর করেছে, তা চিরস্থায়ী করেছে।

كلا - কখনো নয়।

الخطبة - হুতামাহ, একটি জাহান্নামের নাম।

ما ادريك - আপনি কি জানেন?

نار - আগুন।

تطلع - তা গ্রাস করবে।

الأفئدة - হৃদরসমূহ, অন্তরসমূহ।

مُؤْصَدَةٌ - পরিবেষ্টিত।

ممددة - দীর্ঘায়িত, প্রলম্বিত।

অনুবাদ

بسمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ الْمَزَةِ

১. দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পিছনে ও সামনে লোকের নিন্দা করে।

الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ

২. যে অর্থ জমায় ও তা বারবার গণনা করে।

يَحْسَبُ أَنَّ مَا لَهُ أَخْلَدَهُ

৩. সে ধারণা করে যে, তার অর্থ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে।

كَلَّا لَيُنبَذَنَ فِي الْحُطَمَةِ

৪. কখনো না; সে অবশ্যই হুতামায় নিক্ষিপ্ত হবে।

وَمَا أَدْرِيكَ مَا الْحُطَمَةُ

৫. আর আপনি কি জানেন, হুতামাহ কী?

نَارُ اللَّهِ الْمُوْقَدَةُ

৬. এটি আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন।

الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ

৭. যা অন্তরসমূহ গ্রাস করবে।

إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُوْصَدَةٌ

৮. নিশ্চয়ই এটি তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে।

في عمد ممددة

৯. দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।

শানে নুযুল
উমাইয়া ইবনু খালফ, ওলীদ ইবনু মুগিরা ও আখনাস ইবনু শুরায়ক মহানবি (স.) ও মুমিনদের গিবত করত এবং তাদের অর্থলিপ্সা ছিল প্রবল। তাদের এই অপকর্মের ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ এই সূরা অবতীর্ণ করেন।

ব্যাখ্যা
সূরা আল-হুমাযাহকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়। প্রথম তিন আয়াত নিয়ে প্রথম অংশ এবং শেষ ছয়টি আয়াত নিয়ে দ্বিতীয় অংশ। প্রথম অংশে তিনটি জঘন্য গুনাহের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে এসব গুনাহের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

এ সুরায় বর্ণিত গুনাহ বা পাপ কাজগুলো হলো-
ক. পশ্চাতে বা গোপনে কারো নিন্দা করা। একে গিবতও বলা হয়। এটি অত্যন্ত খারাপ কাজ। আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনের অন্য আয়াতে গিবত করা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমান বলে উল্লেখ করেছেন।
খ. সামনাসামনি কারো নিন্দা করা। গোপনে নিন্দা করার মতো এটাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এর ফলে মানুষ অপমানিত হয়। অনেক সময় মানুষের মধ্যে ঝগড়াফ্যাসাদ ও মারামারির সৃষ্টি হয়।
গ. ধনসম্পদ জমা করা ও বারবার তা গণনা করা। একে এক কথায় অর্থলিপ্সা বা আয়ের লোভ বলা যায়। ধনসম্পদের প্রতি লোভী হলে মানুষ নানা অবৈধ পথে উপার্জন করতে থাকে। সে কৃপণ হয়ে পড়ে। গরিব-দুঃখীদের অধিকার আদায় করে না। যাকাত, হজ ইত্যাদি ফরজ ইবাদতও পালন করে না। বরং সে সম্পদ জমা করতে থাকে এবং ধারণা করে যে, এসব ধনসম্পদ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে।
এ সূরার দ্বিতীয় অংশে উল্লিখিত তিনটি জঘন্য কাজের শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। গিবত, পরনিন্দা ও অর্থলিপ্সা তিনটিই খারাপ কাজ। এগুলো কবিরা গুনাহ। এজন্য আখিরাতে মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে। অর্থ মানুষকে অমর করে রাখবে এ ধারণাও ঠিক নয়। বরং সকল মানুষকেই মরতে হবে। তারপর হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের হিসাব নেবেন। যারা দুনিয়াতে এ তিনটি জঘন্য কাজ করে আখিরাতে তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের স্থান হবে হুতামাহ নামক জাহান্নামে। হুতামাহর আগুনে ঐ সকল ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জ্বলবে। এমনকি তাদের হৃদয় বা অন্তরও ঐ আগুনে পুড়বে। কোনো কিছুই আগুনের গ্রাস থেকে রেহাই পাবে না।

নৈতিক শিক্ষা
সূরা আল-হুমাযাহ-এর নৈতিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তিনটি মারাত্মক গুনাহের বা পাপ কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো গিবত তথা পশ্চাতে বা গোপনে কারো নিন্দা করা, সামনাসামনি নিন্দা করা ও অর্থলিপ্সা। এ তিনটিই নীতিহীন কাজ, অনৈতিক কাজ। উত্তম চরিত্রবান লোক এসব কাজ করতে পারে না। বরং নীতিবান হতে হলে এসব দোষ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অতএব, আমরাও এসব দোষ থেকে বেঁচে থাকব। কখনো কারো নিন্দা করব না। আর অর্থের প্রতি লোভ করব না। বরং আল্লাহ তায়ালা যে ধনসম্পদ দিয়েছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকব এবং প্রয়োজনমতো তা খরচ করব।

Content added By

সূরা আল-আসর (سُوْرَةُ الْعَصْرِ ) (পাঠ ৯)

99

সূরা আল-আসর আল-কুরআনের ১০৩তম সূরা। এটি মক্কা শরিফে অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা মাত্র ৩টি। এ সুরার প্রথমে আল্লাহ তায়ালা আসর বা মহাকালের শপথ করেছেন। এজন্য এ সূরার নাম রাখা হয়েছে আল-আসর। পবিত্র কুরআনের ছোট সূরাসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। তবে এ সূরার তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। ইমাম শাফিয়ী (র.) বলেছেন, 'যদি মানুষ কেবল এ সূরাটি নিয়ে চিন্তা করত, তবে এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।' (ইবনে কাসির)। অর্থাৎ এ সূরার অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে পারলে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের পথ লাভ করত। সুতরাং আমরা এ সূরাটি অর্থসহ শিখব। অতঃপর এর তাৎপর্য শিক্ষা করব এবং তদানুযায়ী আমল করব।

শব্দার্থ

و - শপথ , কসম ।

الْعَصْرِ - সময়, যুগ, কাল, মহাকাল

ان - নিশ্চয়ই, অবশ্যই

الإنسان - মানুষ

خُسْرٍ - ক্ষতি

الا - ব্যতীত, ছাড়া।

الَّذِينَ - যারা।

أمَنُوا - তারা ইমান এনেছে।

وَعَمِلُوا - তারা আমল করেছে।

الصلحت - সৎকর্মসমূহ।

وَتَوَاصَوْا - তারা পরস্পরকে উপদেশ

الحق - সত্য।

الصَّبْرِ - ধৈর্য।

অনুবাদ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

وَالْعَصْرِ

১. মহাকালের শপথ।

إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ

২. নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।

إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصُّلِحَتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ ، وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ

৩. কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।

শানে নুযুল
ওলীদ ইবনু মুগিরা, আস ইবনু ওয়াইল, আসওয়াদ ইবনু মুত্তালিব প্রমুখ মুশরিক বলত যে, মুহাম্মদ (স.) অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে (তাদের কথার অসারতা প্রমাণ করে) আল্লাহ তায়ালা সূরাটি নাজিল করেন।
ব্যাখ্যা
সূরা আল-আসরের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ তায়ালা সময় বা মহাকালের শপথ করেছেন। মানুষের জীবনে সময় অত্যন্ত মূল্যবান। কেননা দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। এ সময়ের মধ্যেই মানুষকে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। সুতরাং সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। যারা দুনিয়াতে সময়ের সদ্ব্যবহার করবে এবং নেক আমল করবে পরকালে তারাই সফলতা লাভ করবে। তাই সময়ের শপথ করে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষের স্বাভাবিক অবস্থার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই মানবজাতি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তারা সময়ের সদ্ব্যবহার করে না, আল্লাহ তায়ালার আদেশ- নিষেধ মেনে চলে না। যারা এরূপ মনগড়াভাবে জীবনযাপন করবে তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।
তৃতীয় ও শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য চারটি আমলের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ মানবজাতির মধ্যে যারা এ চারটি কাজ করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বরং তারা সফলতা লাভ করবে। আর যারা দুনিয়াতে এ কাজগুলো করবে না তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কাজগুলো হলো ইমান আনা, সৎকর্ম করা, সত্যের উপদেশ দেওয়া ও ধৈর্যধারণের উপদেশ দেওয়া।

এ কাজগুলোর প্রথম দুটি কাজ ব্যক্তিগত। অর্থাৎ প্রথমে ইমান আনতে হবে। তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। এরপর দ্বিতীয় কাজ হলো ভালো কাজ করা। আল্লাহ তায়ালা যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন তা পালন করতে হবে। আর তিনি যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এভাবে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করার নামই নেক কাজ।
চারটি কাজের মধ্যে শেষের কাজ দুটি সামাজিক। অর্থাৎ একা একা এ কাজ দুটি করা যাবে না। এর প্রথমটি হলো-সমাজের মানুষকে সত্যের উপদেশ দেওয়া। অর্থাৎ মানুষকে সত্যপথের দিকে ডাকা। তাদের নেক কাজে উৎসাহিত করা, অন্যায় কাজ থেকে তাদের বিরত রাখা ইত্যাদি। সামাজিক দায়িত্বের শেষটি হলো মানুষকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেওয়া। বিপদ-আপদ, দুঃখকষ্ট আল্লাহ তায়ালারই দান। এগুলোর মাধ্যমে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে হতাশ ও নিরাশ হওয়া যাবে না। বরং ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। এভাবে পরস্পরকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

নৈতিক শিক্ষা
আমরা সবাই সফলতা লাভ করতে চাই। কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না। সুতরাং আমরা ইমান আনব এবং নেক কাজ করব। কোনো প্রকার অন্যায়-অত্যাচার ও অনৈতিক কাজ করব না। সাথে সাথে আমরা আমাদের বন্ধুবান্ধব, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে সত্য ও সুন্দরের দিকে আহবান করব। সবাইকে উত্তম চরিত্রবান ও নীতিবান হতে উৎসাহ দেবো। বিপদে-আপদে ধৈর্যধারণ করব। হতাশ হয়ে কখনো অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করব না।

কাজ : ক্লাসের সব শিক্ষার্থী দুই দলে ভাগ হয়ে যাবে। একদল সূরা আল-আসর অর্থসহ মুখস্থ বলবে। অন্যদল এ সূরার ব্যাখ্যা ও নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে বলবে। একইভাবে দ্বিতীয় দল প্রথম কাজটি এবং প্রথম দল পরের কাজটি করবে।
Content added By

অর্থসহ মুনাজাতের তিনটি আয়াত (পাঠ ১০)

121

পৃথিবীতে চলার জন্য আমাদের নানা জিনিসের প্রয়োজন। এসব জিনিস পাওয়ার জন্য আমরা বহু কষ্ট করি। আল্লাহ তায়ালার দয়া ব্যতীত কোনো কিছুই আমরা লাভ করতে পারি না। মহান আল্লাহ আমাদের রব। তিনিই সবকিছু আমাদের দান করেন। দুনিয়া-আখিরাতের সমস্ত নিয়ামত আল্লাহ তায়ালারই দান। সুতরাং কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকটই প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনাকেই মুনাজাত বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং আমাদের মুনাজাত করার জন্য শিক্ষা দিয়েছেন। আল-কুরআনে মুনাজাতমূলক বহু আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হলো। আমরা এসব আয়াত শিখব ও অর্থ জানব। এরপর এগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করব।

আয়াত ১

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থ: "হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে এবং আখিরাতে কল্যাণ দাও। আর আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২০১)

দুনিয়ার জীবনই মানুষের শেষ নয়। এরপর রয়েছে আখিরাত। আখিরাত হলো চিরস্থায়ী। এর শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। এ দুটি জীবনে কল্যাণ লাভ করাই হলো প্রকৃত সফলতা। দুনিয়ার জীবনে আমরা সুখ-শান্তি চাই। আর আখিরাতে চাই মুক্তি ও সফলতা। পরকালে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া হলো সবচেয়ে বড় সফলতা। আল্লাহ তায়ালার হাতেই রয়েছে এ সমস্ত কল্যাণ ও সফলতা। আল্লাহ তায়ালা এগুলো মানুষকে দান করেন। এজন্য আমরা তাঁর কাছেই প্রার্থনা জানাব। উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এ শিক্ষাই প্রদান করেছেন। দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কল্যাণ লাভের জন্য এ দোয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আয়াত ২

رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

অর্থ: "হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর। যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে লালনপালন করেছেন।" (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৪)

মাতাপিতা সন্তানের অতি আপনজন। তাঁরা অত্যন্ত আদর-স্নেহে সন্তানকে লালনপালন করেন। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান। নিজেরা কষ্ট করে সন্তানকে আরাম-আয়েশে রাখেন। বিশেষ করে শৈশবকালে তাঁরা আমাদের খুব যত্নের সাথে প্রতিপালন করেন। শিশুকালে সকল মানুষই অসহায় থাকে। নিজে নিজে দাঁড়াতে পারে না, খেতে পারে না, চলাফেরা করতে পারে না। এমনকি কথাবার্তাও বলতে পারে না। মাতাপিতাই এ সময় মানুষের সবচেয়ে বড় অবলম্বন। তাঁরাই এ সময় সন্তানকে মায়া-মমতা দিয়ে বড় করে তোলেন। অতএব, আমাদের সকলের কর্তব্য মাতাপিতার আনুগত্য করা। তাঁদের কথা মেনে চলা। তাঁদের জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করা। এ আয়াতে মহান আল্লাহ মাতাপিতার জন্য দোয়া করার বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা এ আয়াত অর্থসহ শিখব। অতঃপর আন্তরিকভাবে এ আয়াত পড়ে মহান আল্লাহর নিকট আমাদের মাতাপিতার জন্য দোয়া করব। তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাঁদের কল্যাণ ও রহমত দান করবেন।

আয়াত ৩

رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا

অর্থ: “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর।" (সূরা তা-হা, আয়াত: ১১৪)
উক্ত আয়াতে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য মুনাজাত করার কথা বলা হয়েছে। জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। কেননা শিক্ষা ও জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালাকে চিনতে পারি। তার বিধান ও বাণী জানতে পারি। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে আমরা মানুষের মতো মানুষ হই। জীবনে উন্নতি লাভের জন্যও জ্ঞানার্জন করা জরুরি। সুতরাং আমরা ভালো করে লেখাপড়া শিখব। জ্ঞানার্জনে কোনোরূপ অবহেলা করব না। আর সাথে সাথে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট মুনাজাত করব। কেননা মহান আল্লাহই সবকিছুর মালিক। তিনিই মানুষকে জ্ঞান দান করেন। অতএব, জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য তাঁর নিকটই প্রার্থনা করতে হবে।

কাজ: শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে মুনাজাতমূলক আয়াত তিনটি অর্থসহ মুখস্থ বলবে।
Content added By

আল-হাদিস (الْحَدِيثُ ) (পাঠ ১১)

80

হাদিস আরবি শব্দ। এর অর্থ কথা, বাণী ইত্যাদি। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর বাণী, কাজ ও অনুমোদনকে হাদিস বলা হয়। অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবি (স.) যা কিছু বলতেন তা-ই হাদিস।

তিনি যে সমস্ত কাজ করেছেন তাও হাদিস। আর যে সমস্ত কাজ সাহাবিগণ তাঁর সামনে করেছেন কিন্তু তিনি তাঁদের নিষেধ করেননি বরং ঐ সমস্ত কাজে মৌনসম্মতি দিয়েছেন এগুলোও হাদিস। হাদিসের অপর নাম হলো সুন্নাহ।
সাহাবিগণ রাসুল (স.)-এর সবরকম হাদিসই সংরক্ষণ করতেন। রাসুল (স.) কিছু বললে সাথে সাথে তাঁরা তা মুখস্থ করতেন। নবি করিম (স.) যে কাজ যেভাবে করতেন সাহাবিগণও তা ঠিক তেমনিভাবে আদায় করতেন। অতঃপর নিজ পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবগণের নিকট এগুলো পৌঁছে দিতেন। এভাবে মহানবি (স.)-এর জীবদ্দশায় হাদিস সংরক্ষণ করা হয়। নবি করিম (স.)-এর ইন্তিকালের পর সাহাবিগণ মজলিস করে হাদিস শিক্ষা দিতেন। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন তাঁদের নিকট হাদিস শিখতে আসতেন। পরবর্তীকালে মুহাদ্দিসগণ রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সকল হাদিস লিপিবদ্ধ করে রাখেন। তাঁরা হাদিসের বহু কিতাব সংকলন করেন। এভাবে আমরাও নবি কারিম (স.)-এর হাদিস লাভ করি।

হাদিসের গুরুত্ব

ইসলামে হাদিসের স্থান অত্যন্ত ঊর্ধ্বে। ইসলামি জীবনব্যবস্থার দ্বিতীয় উৎস হলো হাদিস। আর এর প্রথম উৎস হলো আল-কুরআন। সুতরাং ইসলামে আল-কুরআনের পরই হাদিসের স্থান। হাদিস হলো আল- কুরআনের ব্যাখ্যাস্বরূপ। আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নানা নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর নবি করিম (স.) হাদিসের মাধ্যমে তা মানুষের নিকট বিশ্লেষণ করেছেন। নিচের উদাহরণটি পড়লে আমরা স্পষ্টভাবে বিষয়টি বুঝতে পারব। যেমন: আল-কুরআনে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কীভাবে আমরা সালাত আদায় করব তা বলে দেওয়া হয়নি। একাকী পড়ব না-কি সকলে মিলে পড়ব, কত রাকআত পড়ব, কোন সময় পড়ব, রুকু-সিজদাহ্ কীভাবে করব ইত্যাদি কিছুই কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। এগুলো আমরা হাদিসের মাধ্যমে পাই। রাসুলুল্লাহ (স.) এসব নিয়মকানুন আমাদের বলে দিয়েছেন। তিনি নিজে সালাত আদায় করে আমাদের হাতেকলমে শিক্ষা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিস না থাকলে আমরা তা কখনোই জানতে পারতাম না। সুতরাং কুরআনের পরই হাদিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসুল। তিনি ছিলেন মানবজাতির জন্য আদর্শ। তাঁর মাধ্যমেই আমরা আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভ করি। তিনি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশেই আমাদের সৎপথ প্রদর্শন করেছেন। তিনি মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিতেন। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতেন। তাঁর এসব আদেশ-নিষেধই হলো হাদিস।
পবিত্র হাদিস আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেছেন, "রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর। আর যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।" (সূরা আল-হাশ্র, আয়াত: ৭)
অতএব, রাসুল (স.)-এর হাদিস আমরা পাঠ করব। তার অর্থ বুঝব এবং সে অনুযায়ী আমল করব। তাঁর আদেশগুলো মেনে চলব এবং নিষেধগুলো থেকে বিরত থাকব।

Content added By

অর্থসহ নৈতিক গুণাবলি বিষয়ক দুটি হাদিস (পাঠ ১২)

241

নীতি ও নৈতিকতা মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য। নীতি হলো কথায় ও কাজে সৎ, সুন্দর ও মার্জিত হওয়া। কোনোরূপ অন্যায়, অত্যাচার ও অশালীন কাজকর্ম না করা। নীতিহীন মানুষ পশুর সমান। যে ব্যক্তি চলাফেরা ও কথাবার্তায় নীতির অনুসরণ করে না, সমাজের সকলে তাকে ঘৃণা করে। অন্যদিকে নীতিবান মানুষকে সবাই ভালোবাসে। সকলে তাকে শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বোত্তম নীতির অধিকারী। তিনি সর্বদা নীতি ও আদর্শের অনুশীলন করতেন। উত্তম চরিত্র ও নীতির জন্য শত্রুরাও তাঁর প্রশংসা করত।
হাদিসসমূহে আমরা দেখতে পাই মহানবি (স.) উম্মতগণকেও নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছেন। নিম্নে দুটি নীতিমূলক হাদিস উল্লেখ করা হলো। আমরা এগুলো মুখস্থ করব, এর অর্থ জানব। আমরা এ নীতিমূলক হাদিস অনুযায়ী আমল করব।

হাদিস ১

لَا دِينَ لِمَنْ لَّا عَهْدَ لَهُ

অর্থ: 'যে ব্যক্তি অঙ্গীকার পালন করে না তার কোনো দীন নেই অর্থাৎ সে প্রকৃত দীনদার নয়।' (ওয়াবুল ইমান)
শিক্ষা
অঙ্গীকার পালন করা নীতি-নৈতিকতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা নানা সময় নানারূপ ওয়াদা ও অঙ্গীকার করে থাকি। এসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। পরস্পর মারামারি ও অশান্তি ঘটে। সুতরাং সামাজিক শান্তির জন্য অঙ্গীকার রক্ষা করা আবশ্যক। ইসলামে অঙ্গীকার রক্ষা করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মহানবি (স.) নিজে সর্বদা অঙ্গীকার রক্ষা করে চলতেন। অঙ্গীকার ভঙ্গ করা প্রকৃত দীনদার ব্যক্তির লক্ষণ নয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ দীনদার সে সবসময় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলবে। সে কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে না। অতএব, আমরা কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করব না। বরং জীবনের সকল প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চেষ্টা করব। তাহলে আমরা প্রকৃত দীনদার হতে পারব।

হাদিস ২

وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ (بخاری و مسلم)

অর্থ: 'তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মিথ্যা (মানুষকে) পাপের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপ জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।' (বুখারি ও মুসলিম)
শিক্ষা
মিথ্যা হলো সত্যের বিপরীত। প্রকৃত কথা, কাজ, বিষয়, অবস্থা ইত্যাদি গোপন করাকে মিথ্যা বলা হয়। মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না। কেউ তাকে ভালোবাসে না। মিথ্যাবাদীকে কেউ সাহায্য-সহযোগিতাও করে না। মহানবি (স.) ছিলেন চরম সত্যবাদী। তিনি জীবনে কোনোদিন মিথ্যা কথা বলেননি। তিনি মানুষকে সত্য কথা বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং মানুষকে মিথ্যা ত্যাগ করতে বলেছেন। কেননা মিথ্যা হলো সকল পাপের মূল। মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়। কোনো পাপ কাজ করে মিথ্যা বললে অনেক সময় তা ধরা যায় না। ফলে মানুষ পুনরায় পাপ করতে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখেন ও জানেন। তার নিকট মিথ্যা বলা যায় না। বরং দুনিয়ার সব পাপের তিনি হিসাব রাখেন। হাশরের ময়দানে তিনি এসবের বিচার করবেন।
যেহেতু মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপের শাস্তি হলো জাহান্নাম। সুতরাং আমরা মিথ্যা বলা পরিহার করব। সর্বদা সত্য কথা বলব। তাহলে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাব।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দুই দলে ভাগ হয়ে যাবে। একদল নৈতিক গুণাবলি বিষয়ক হাদিস দুটি অর্থসহ মুখস্থ বলবে। অন্যদল হাদিস দুটির শিক্ষা সম্পর্কে বলবে। আবার প্রথম দল উক্ত হাদিসের শিক্ষা এবং দ্বিতীয় দল হাদিস দুটি অর্থসহ মুখস্থ বলবে।
Content added By

অর্থসহ মুনাজাতমূলক দুটি হাদিস (পাঠ ১৩)

169

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন মানবজাতির মহান শিক্ষক। তিনি মানুষকে সবধরনের কল্যাণের পথে পরিচালনা করতেন। মানুষ কীভাবে চললে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করবে তাও তিনি দেখিয়ে গেছেন। উম্মতের কল্যাণের জন্য তিনি বহু মুনাজাত শিক্ষা দিয়েছেন। এসব মুনাজাত হাদিস শরিফে লিপিবদ্ধ রয়েছে। নিম্নে মুনাজাতমূলক দুটি হাদিস উল্লেখ করা হলো। আমরা এ হাদিস দুটি অর্থসহ মুখস্থ করব এবং এগুলোর দ্বারা আল্লাহ তায়ালার নিকট মুনাজাত করব।

হাদিস ১

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَخَطَئِي وعَمَدِی (طبرانی)

অর্থ: 'হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহ, ভুলত্রুটিগুলো এবং ইচ্ছাকৃত অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দাও।' (তাবারানি)
আমরা কথাবার্তা, চলাফেরায় নানারূপ পাপ কাজ করে ফেলি। ছোটো-বড়ো, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত এসব পাপ আখিরাতে আমাদের শাস্তির কারণ হবে। অতএব, এগুলো থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা চাওয়া দরকার। কেননা মহান আল্লাহই একমাত্র ক্ষমা করার মালিক। সুতরাং আমরা সবসময় এ হাদিসের মাধ্যমে ভুলত্রুটি ও পাপের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইব।

হাদিস ২

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَ رِزْقًا طَيِّبًا (ابن ماجة )

অর্থ: 'হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী বিদ্যা এবং পবিত্র (হালাল) রিজিক চাই।' (ইবনু মাজাহ)
খাদ্য ও জ্ঞান মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর উপকারী বিদ্যা অর্জন করাও জরুরি। এ উভয় জিনিসের জন্যই মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে। এ হাদিসের মাধ্যমে প্রিয় নবি (স.) আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার নিকট এ দুটি জিনিসের জন্যই প্রার্থনা করার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা এ দোয়াটি মুখস্থ করব ও এর মাধ্যমে মুনাজাত করব।

কাজ: শিক্ষার্থীরা উভয় হাত তুলে নিজেদের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করবে এবং প্রার্থনায় পাঠের হাদিস ২টি অর্থসহ বলবে।
Content added By

নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় হাদিস (পাঠ ১৪)

299

জীবনের সকল ক্ষেত্রে মনুষ্যত্ব ও নীতি-আদর্শের শিক্ষাকে ধরে রাখার চেষ্টা ও চেতনাই হলো নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ। আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য এ মূল্যবোধের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ মানুষকে উত্তম চরিত্রবান করে গড়ে তোলে। ফলে মানুষ সমাজে সম্মান ও মর্যাদা লাভ করে। সকলে এ আদর্শ অনুশীলন করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
অন্যদিকে সমাজে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ না থাকলে সমাজে শান্তি থাকে না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারণা ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে দয়া, মায়া, ঐক্য, ভালোবাসা ইত্যাদি সদ্গুণাবলির চর্চা থাকে না। মানুষ পরস্পরকে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করে। ফলে সমাজে নানা অরাজকতা ও অশান্তির সৃষ্টি হয়।
মহানবি (স.)-এর হাদিস নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা পূর্বপাঠে হাদিসের পরিচয় লাভ করেছি। হাদিসের মাধ্যমে আমরা প্রিয় নবি (স.)-এর বাণী ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। তিনি মানুষের সাথে কীরূপ আচরণ করতেন তা জানতে পারি। তাঁর উত্তম চরিত্রের কথা জানতে পারি। তিনি আমাদের জন্য কী দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন তাও আমরা হাদিস পড়ে জানতে পারি।

হাদিস শরিফে প্রিয় নবি (স.) আমাদের নানাবিধ নৈতিক ও মানবিক আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। দয়া, ক্ষমা, সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, পরস্পর সহযোগিতা ইত্যাদি গুণ অনুশীলনের জন্য উৎসাহিত করেছেন। আবার মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, চুরি-ডাকাতি করা, গালিগালাজ করা, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা ইত্যাদি খারাপ কাজ করতে আমাদের নিষেধ করেছেন। হিংসা-বিদ্বেষ, গর্ব-অহংকার, খোশামোদ-তোষামোদ ইত্যাদিও খারাপ অভ্যাস। এগুলো মানবিক আদর্শের বিপরীত। এগুলো নৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে। এগুলো থেকেও বিরত থাকার জন্য মহানবি (স.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-

إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْخَطَبَ أَبُوْدَاوُدٍ)

অর্থ: 'তোমরা হিংসা থেকে বিরত থাকবে। কেননা আগুন যেমন কাঠকে পুড়িয়ে দেয় হিংসাও তেমনি নেক আমলসমূহকে ধ্বংস করে দেয়।' (আবু দাউদ)

সৎগুণাবলির অনুশীলন ও অসৎ গুণাবলি থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে আমরা উত্তম চরিত্রবান হতে পারি। এগুলো আমাদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষায়ও সাহায্য করে। এভাবে হাদিসের শিক্ষা আমাদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
হাদিস শরিফে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনচরিত ও উত্তম চরিত্রের আদর্শ বর্ণিত আছে। আমাদের প্রিয় নবি (স.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলেছেন-

وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ

অর্থ: "আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।" (সূরা আল-কালাম, আয়াত: ৪)

মহানবি (স.) ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। তিনি সবসময় নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অনুসরণ করতেন। তাঁর একটি উপাধি ছিল আল-আমিন। আল-আমিন অর্থ বিশ্বাসী, বিশ্বস্ত, সত্যবাদী। তিনি সবসময় সত্য কথা বলতেন। কথা ও কাজে সততা অবলম্বন করতেন। কেউ কোনো কিছু আমানত বা গচ্ছিত রাখলে তিনি তা মালিকের নিকট যথাযথভাবে ফেরত দিতেন। তিনি কখনো মিথ্যা বলতেন না, ওয়াদা ভঙ্গ করতেন না, বিশ্বাসঘাতকতা করতেন না। ফলে তাঁর শত্রুরাও তাঁকে আল-আমিন বা বিশ্বাসী নামে ডাকত।
এভাবে দেখা যায়, সবধরনের সৎগুণ রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চরিত্রে বিদ্যমান ছিল। তিনি ছিলেন ক্ষমাশীল, দয়াবান, অতিথিপরায়ণ, মিষ্টভাষী। তিনি অন্যায় ও অশ্লীল কাজ কখনো করতেন না। অশালীন চলাফেরা ও কথাবার্তা তাঁর থেকে কখনো প্রকাশিত হয়নি। সারাজীবন তিনি মানুষকে উত্তম চরিত্র সম্পর্কে হাতেকলমে শিক্ষা দিয়েছেন। রাসুলের (স.) এ আদর্শ নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষার উজ্জ্বল প্রমাণ। প্রিয় নবি (স.)-এর চরিত্র অনুসরণ করলে কখনোই নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ লঙ্ঘিত হবে না। বরং এর দ্বারা আমরা প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারব। আমাদের মধ্য থেকে দুর্নীতি ও পশুত্ব দূরীভূত হবে। রাসুলের (স.) জীবনাদর্শ হাদিস শরিফে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলো মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা স্বরূপ। আমরা হাদিস পড়ে এগুলো জানব এবং সে অনুযায়ী আমল করব।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...